রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৪:৩২ অপরাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের খবর : রাজধানীর কামরাঙ্গীরচরে ছয় আওয়ামী লীগের নেতার বাড়িতে হামলার ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতে আরেক আওয়ামী লীগ নেতা চুন্নু মিয়ার বাড়িতে হামলা করেছে ৫৬ নাম্বার ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. হোসেন ও তাঁর ক্যাডার বাহিনী। থানা কমিটিতে চাহিদা অনুযায়ী পদ না পেয়ে কাউন্সিলর মো. হোসেনের ঘনিষ্ঠ ৫৬ নাম্বার ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি আমিনুল ইসলামের নেতৃত্ব সুমন কবির, ইসমাঈলসহ অর্ধশত ক্যাডার বাহিনী হামলা করে ভেঙে চুরে বাড়ি-ঘর গুড়ি দেয়া হয়।
শুক্রবার দুপুরে ৫৬ নম্বার ওয়ার্ডের নড়গ্রাম ব্যাটারীঘাট এলাকায় জুম্মার নামাজ শেষে বাড়িতে আসার পরপরই দেশিয় অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে এই হামলা চালানো হয়। ওই সময় ৫৬ নাম্বার ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের শ্রম বিষয়ক সম্পাদক চুন্নু মিয়াকে নির্মমভাবে পিটিয়ে গুরুতর আহত করে ফেলে যায়। ক্যাডার বাহিনীর তাণ্ডবের পর দ্রুত চুন্নু মিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিক্যাল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। মাথায় গুরুতর আহত হওয়ায় নিউরোসাইন্স বিভাগের ২০০ নাম্বার ওয়ার্ডে মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছেন চুন্নু।
চুন্নুর পরিবারের অভিযোগ, কাউন্সিলর হোসেন ও তাঁর লোকজন জোটবদ্ধ হয়ে অতর্কিতে বাড়িতে হামলা করে বাড়ির সবকিছু তছনছ করে দেয়। বাড়ির সব জিনিসপত্র ভেঙে গুড়িয়ে দেয়। চুন্নু মিয়াকে কুকুরের মতো নির্মমভাবে পিটিয়ে মৃত ভেবে ফেলে যায় ওরা। যাওয়ার সময় উল্লাস করে যায় এবং বলে কাউন্সিলর হোসেনের কথার বাইরে গেলেই এমন পরিস্থিতি সবার হবে।
এদিকে, ওই ঘটনার পরপরই এলাকার সরেজমিন দেখতে আসেন স্থানীয় এমপি ও খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম দেখতে আসেন চুন্নু মিয়াকে দেখতে।
সঙ্গে ছিলেন কামরাঙ্গীরচর থানার ওসি শাহীন ফকির। ওসিকে ওই সময় খাদ্যমন্ত্রী নির্দেশ দেন যে, এই চুন্নুর পরিবার যাদের বিরুদ্ধে মামলা কতে বলবে তাদের বিরুদ্ধেই যেন মামলা করা হয়। তবে কামরাঙ্গীরচর থানা আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা ক্ষুদ্ধ কণ্ঠে বলেন, খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম ও ওসি শাহীন ফকিরের মদদেই কাউন্সিলর মো. হোসেন ও তাঁর ক্যাডাররা এলাকায় বেপরোয়া হয়ে উঠছেন। খাদ্যমন্ত্রীর যত সুনাম আছে সব নষ্ট করে ফেলছে কাউন্সিলর হোসেন। এলাকার ৯০ ভাগ আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা কামরুল ইসলামের পক্ষে ছিলেন কিন্তু কাউন্সিলর হোসেনের কারণে নিরবে বেশিরভাগই এখন দূরে সরে গেছে। গোপনে গোপনে কেরানীগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান শাহীন চেয়ারম্যানের পক্ষে আছেন।
নেতাকর্মীরা ক্ষুদ্ধ কণ্ঠে বলেন, দুইদিন আগে এই কাউন্সিলর হোসেন ও তাঁর ক্যাডার বাহিনীর আক্রমন করে ৬ জন আওয়ামী লীগের নেতার বাড়ি ঘর গুড়িয়ে দিয়েছে। কিন্তু সেই ঘটনার রেশ এখনও যায়নি কিন্তু এরই মধ্যে আওয়ামী লীগ নেতা চুন্নুর বাড়ি ঘর ভাংচুর এবং তাকেও নির্মমভাবে পিটিয়ে আহত করলো।
চুন্নুর স্ত্রী আখি বেগম কালের কণ্ঠকে বলেন, আমার স্বামীকে বাড়িতে টেনে হেচরে বাড়ির বাইরে নিয়ে চোখের সামনেই মারলো। বাচাতে যাওয়ায় আমাকে গলায় ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয় এবং আমার বাচ্চাকেও মারার জন্য তেড়ে আসে। মারতে মারতে যখন মাটিতে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে তখন ওরা বাড়ি আসবাবপত্র ছিন্নভিন্ন করে ফেলে।
আঁখি কাদঁতে কাদঁতে বলেন, আমার স্বামীর একটাই দোষ সে কমিটিতে পদ পাইছে। এটা পাওয়ার পর আওয়ামী লীগ আমিনুল ইসলামসহ তাঁর ক্যাডার বাহিনী নিয়ে আমার স্বামীকে এভাবে মারধর করলো। এখনও কথা বলতে পারে না। মাথায় আঘাত পেয়ে মারাত্বক অবস্থা।
হাসপাতালে বাবার বেডের পাশেই বসে আসে চতুর্থ শ্রেণি পড়ুয়া চুন্নুর মেয়ে ইভা। বাবার মাথায় হাত বুলাতে থাকে। দুচোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে পানি। বাবাকে মারার সময় তুমি কোথায় ছিলা জানতে চাইলে ইভা বলে, আমি বাসায় বাবার সঙ্গে বসে ছিলাম। আমার বাবাকে আমার সামনেই টানতে টানতে নিয়ে মারতে থাকে। বাবার হাতটি ধরেছি বলেই আমাকে বলে, তোরেও গলাটিপে ফেরে ফেলবো। আমার বাবাকে ওরা অনেক মারছে বলেই কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে শিশুটি।
চুন্নুর ভাগ্নি নাসিমা আক্তার বলেন, কি কারণে আমার মামাকে মারলো সেটা কেউ বলতে পারি না। শুনতেছি মামা নাকি আওয়ামী লীগের পদ পাইছে। পদ পেলে কি এভাবে একটি মানুষকে এভাবে মেরে ফেলার চেষ্টা করতে পারে।
ডাক্তার বলেছেন, মামার মাথায় মারাত্বক আঘাত পেয়েছে, আশংকরা মধ্যেই আছে।